লিড-নিউজ :: করোনার ভয়াল থাবায় বিশ্ব এখন অসুস্থ। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস এখন যেন সবার কাল হয়ে দাড়িয়েছে। আতঙ্ক কাজ করছে প্রত্যেকের মনে। আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা যেন লাগামহীনভাবে বেঁড়েই চলেছে। সামান্য জ্বর, সর্দি, কাশি হলেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে বলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে মানুষ। নিজেকে গৃহবন্দি করে ফেলেছে অনেকেই। ছুটে যায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে। চলুন তবে জেনে নেই এই পরিস্থিতিতে কী কী করণীয়:
চিকিৎসকরা বলছেন, সামান্য জ্বর, সর্দি হলে করোনা সংক্রমণ ভেবে পরীক্ষা-নিরিক্ষার জন্য ছোটাছুটির কোন দরকার নেই। তাতে অযথা মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলা হবে। কারণ, মৌসুম বদলালে এমনিতে অনেকেরই জ্বর, সর্দি, কাশি হয়। যারা ‘ক্রনিক পেশেন্ট’, তাদের তো এমনিতেই হয় জ্বর, সর্দি, কাশি।
তবে এখন যা পরিস্থিতি, তাতে ডাক্তারদের পরামর্শ হচ্ছে, জ্বর, সর্দি, কাশি হলেই চলে যান ডাক্তারের চেম্বারে। দেরি করবেন না। বা অবহেলা করে বাড়িতেই চেনাজানা ওষুধ খেয়ে তা কমানোর চেষ্টা করবেন না। তা হলে বরং হিতে বিপরীত হতে পারে।
একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলছেন, জ্বর হলেই জানতে চাওয়া হবে তা কত দিন হয়েছে? জ্বর দিনে ক’বার আসছে? সেটা কী ভাবে কতটা ওঠানামা করছে? জ্বর কি কাঁপুনি দিয়ে আসছে?
প্রথম সাক্ষাতেই আপনার কাছ থেকে এই সব কিছু জেনে নেওয়া হবে। যদি দেখা যায় জ্বরটা কাঁপুনি দিয়ে আসছে, তা হলে ম্যালেরিয়ার সম্ভাবনা খুঁজে দেখতে শুরু করবেন চিকিৎসকেরা। যদি দেখা যায় জ্বরটা ছেড়ে বা কমে গিয়ে দিনে দু’য়েক বার বা কিছুক্ষণ পর পর তা আবার প্রবলভাবে ফিরে আসছে, তাহলে ডেঙ্গুর সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখবেন ডাক্তাররা।
শুকনো কাঁশি হলে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনার কথা ভাববেন ডাক্তাররা। তবে নিশ্চিত হতে তাদের আরও কয়েকটি ধাপ এগুতে হবে।
আর যদি শুকনো কাঁশি না হয়, কাঁশির সঙ্গে আপনার খুব ঘন কফ উঠে আসে তাহলে ডাক্তাররা আরও কিছু জানতে চাইবে। ‘কারও কফ যদি সাদা হয়, তা হলেই ডাক্তার বুঝে যাবেন, তিনি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। তখন সেই সংক্রমণ থেকে বের করে আনতে তাকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হবে। সেই সময় থেকেই ডাক্তারদের পরবর্তী ধাপগুলোর কথা ভাবতে হবে। কফের রং হলুদ হলেই সেটা চিন্তার কারণ হয়ে উঠবে। আর রং লাল হলে তো কথাই নেই।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, তখন ডাক্তাররা রোগীর কাছে জানতে চাইবেন:
বিদেশ থেকে আসা কারও সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে কি না? হলে কত দিন আগে হয়েছে? তিনি কোন দেশ থেকে কোন রুট ধরে ঢাকায় এসেছেন? বিদেশ থেকে ফেরা কতজনের সঙ্গে তিনি গত দু-এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা করেছেন? তাদের কতটা ঘনিষ্ঠ হয়েছেন?
এইভাবে রোগীর কাছ থেকে তার গত কয়েক দিনের জীবনযাপনের ‘হিস্ট্রিটা জেনে নেবেন ডাক্তাররা।
পরবর্তীতে ডাক্তাররা বলতে পারেন বুকের এক্স-রে করাতে। বিদেশিদের সঙ্গে সাক্ষাতের ‘হিস্ট্রি’ পেলে আর বুকের এক্স-রে রিপোর্টে সন্দেহজনক কিছু পেলেই ডাক্তাররা আপনাকে বলবেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে প্রয়োজনীয় রক্তপরীক্ষা করান। গলা ও নাকের মধ্যে থাকা থুতু পরীক্ষাও করাতে বলবেন তখন চিকিৎসকেরা।
তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ, জ্বর, সর্দি, কাশি হলেই অযথা আতঙ্কিত হয়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পরীক্ষার জন্য ছুটোছুটি করে লাভ নেই। বরং দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যান।