মামুনুর রশিদ
স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের তথ্যানুযায়ী, স্বাধীনতা পরবর্তী নির্বাচন ১৯৭৯ সালে তৎকালীন ফরিদপুর-৫ আসন (বর্তমান-ফরিদপুর-৪) ভাঙ্গা থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন (মার্কা তালাচাবি) কাউলীবেড়া কাজী পরিবার থেকে প্রয়াত ডাঃ কাজী আবু ইউসুফ। তিনি ভাঙ্গা-সদরপুরের সাধারণ জনগণের ম্যানডেট নিয়ে বিপুল ভোটে সাংসদ নির্বাচিত হন।
পরবর্তীতে তিনি আওয়ামীলীগে যোগদান করেন এবং একমাত্র এরশাদ সরকারের জাতীয় পার্টির স্বৈর শাসন আমল ছাড়া ভাঙ্গায় কাজী পরিবার ছাড়া অন্য কোন দলের প্রাথী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারে নি। যদিও বিএনপি জোট সরকারের আমলে এমএম শাহরীয়া রুমি আওয়ামীলীগ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাতে ধানের শীষের গুচ্ছ ও ফুলের তোরা দিয়ে মহাসমারোহে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে তিনি সংসদ নির্বাচন করেন।
রাজনীতির জোয়ারে ভাঙ্গার আকাশে বাতাসে সেদিন এমএম শাহরীয়া রুমির নামে জয়ধ্বনি ফুটে উঠেছিল এবং ভোটের লড়াইয়ে আওয়ামীলীগের প্রাথী ও প্রেসিডিয়াম মেম্বর কাজী জাফর উল্লার সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার পরেও এমএম শাহরীয়া রুমি স্বল্প সংখ্যক ভোটে পরাজিত হন।
ভাঙ্গায় আওয়ামীলীগের কোন বিকল্প নেই। নেতাকর্মীদের মধ্যে মূলত এমন বদ্ধ ধারনার সৃষ্টি থেকে এগিয়ে চলে আওয়ামীলীগের রাজনীতি। বিএনপি জামাত জোট সরকারের পতনের পর আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের করে। এরপর থেকে ভাঙ্গায় ভিন্ন চিত্র ধারণ করে আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের গুটি কয়েক নেতা। বিশেষ করে সভাপতি কাজী সাকলাইন ও সাধারণ সম্পাদক ফাইজুর রহমানসহ ২য় সারির নেতাকর্মী।
উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ের দলীয় কোন নেতাকর্মী রাজনৈতিক অথবা সামাজিক কোন সমস্যায় পতিত হয়েছে! উদ্ধার পেতে হলে বিশেষ উপঢৌকন ছাড়া রক্ষা পায় নি কেউ। সুযোগ আস্লেই অর্থনৈতিক গলা কেটেছেন চরমহারে অভিযোগ নেতাকর্মীদের। থানা পুলিশ নিয়ে বাণিজ্য, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগসহ ভাঙ্গায় প্রতিটি স্তরে ছিল এই সকল নেতা গংদের অবাধ বাণিজ্য।
বিশেষত উল্লেখ্য, ভাঙ্গা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে (বর্তমান সরকারি) আওয়ামীলীগ থেকে যাদেরকে সভাপতি করা হয়েছে সুযোগ আসলেই সভাপতি গং হাতিয়ে নিয়েছেন নানা কৌশলে বাণিজ্য। শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট থাকলেও অপরিপক্ক শিক্ষক নিয়োগ করে ভাঙ্গায় শিক্ষা ব্যবস্থা বার বার হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে সচেতন মহলের অভিমত।
ভাঙ্গায় আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে প্রেসিডিয়াম মেম্বর ও সাবেক সাংসদ কাজী জাফর উল্লা তার নির্বাচনী এলাকায় একজন সৎ ও সজ্জন ব্যক্তি হিসাবে সাধারণ জনগণের কাছে ভূষিত।
সাধারণ জনগণের ভাষায়, কাজী পরিবারের সচেয়ে বড় একটি গুন, তাদের পরিবারের কেউ নোংরা রাজনীতি ও প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। প্রতিহিংসার রাজনীতি তিনি করলে হয়ত বিভিন্ন সময়ে ভাঙ্গায় বিএনপির নেতাকর্মীরা অবাধে মাঠে মিছিল সমাবেশ করতে পারতেন না। দলীয় নেতাকর্মীদের ভুলগুলো সংশোধন হওয়ার একাধীক সুযোগ দেন। যদি কেউ নিজের থেকে সংশোধন না হয় তাহলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হন।
সূত্র মতে, কাজী পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা পৌরুষ প্রয়াত কাজী মাহাবুব উল্লা ভাঙ্গায় ও সদরপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার পাশাপাশি ভাঙ্গা বেগম জেবুনন্নেছা ট্রাস্ট থেকে অসহায় ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানসহ রাজনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে যাদের অবদান অনায়েসে সর্ব মহলে বিশেষভাবে স্বীকৃত।
কিন্তু কাজী জাফর উল্লা ভাঙ্গায় তার নেতাকর্মীদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসী হওয়ায় তার সরলতার সুযোগ নিয়ে নেতাকর্মীদের কেউ কেউ আজ ভাঙ্গায় কোটি পতির বনে পা রেখেছেন। দলের চেয়ে নিজেদের আখের গুছিয়েছে বলে ভাঙ্গায় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কাঠামো নাজুক অবস্থায় গিয়ে দাড়ায়। অতপর শক্ত হাতে দলীয় সকল কিছু অভিজ্ঞ আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের সমন্বয়ে নতুন আঙ্গিকে কাজ শুরু করেন কাজী জাফর উল্লা।
জানা গেছে, ভাঙ্গায় আওয়ামীলীগের রাজনীতিকে মূলত প্রশ্নবিদ্ধর সামনে ঠেলে দিয়েছে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। স্থানীয় আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ তাদের সহযোগীরা দলীয় মনোনয়ন যাচাই বাচাই ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান প্রাথীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ায় সাধারণ জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে এবং কাজী জাফর উল্লার মাঠের রাজনীতিকে ঝোড় হাওয়ার বুকে ঠেলে দেয়।
দলীয় কিছু নেতাকর্মীর উপরে আস্থা রেখে মাঠে নিজের অবস্থান সংকুচিত হয়ে পড়েছে বুঝতে পেরে ঘরে দাঁড়ান তিনি। অতপর তৃণমূল নেতা কর্মীদের অভিযোগ অভিমতের প্রতি কাজী জাফর উল্লা গুরুত্ব সহকারে নিয়ে একটি বিশেষ টিম দিয়ে গোপনে সকল অভিযোগ তদন্ত করার পর শতভাগ নিশ্চিত হন।
অভিযোগের সূত্রতায় স্থানীয় আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ফরিদপুরের জেলা কমিটি সাময়িকভাবে বহিস্কার ঘোষণা করেন।
দুই নেতার বহিস্কার ঘোষণার পর তাদের সহযোগীরা বেশ দুর্বল হয়ে পরে। নিজেদের মধ্যে একটি ত্রাহী সৃষ্টি হয়। আতঙ্কে থাকেন আওয়ামীলীগ পদ থেকে তাদের হয়ত বহিস্কার ঘোষণা আসছে। এই ভয়ে কেউ কেউ আবার আওয়ামীলীগের প্রতিপক্ষের ঘরে গোপনে যোগাযোগ শুরু করেন। অনেকেই আবার সরাসরি যোগদানও করেন।
অন্যদের মধ্যে কেউ আবার রাতের আঁধারে কাজী জাফর উল্লার বনানী অফিসে গিয়ে এবং ক্ষুদ্র নেতারা কাউলীবেড়া বাড়িতে গিয়ে ক্ষমা প্রাথনা চেয়ে নিজের পদ রক্ষা করেন।
এদিকে দুই নেতার বহিস্কার ঘোষণার পর বেশ নাটকীয়তা জমে উঠে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দাবী তাদেরকে অবৈধভাবে বহিস্কার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের রক্ষা করতে শেষ চেষ্টা চালায়। এরপর ভাঙ্গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সভা থেকে কাজী সাক্লাইন নিজেকে ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রাথী হিসাবে ঘোষণা দেন।
কিন্তু কাজী জাফর উল্লা তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় রাজনৈতিক ময়দানে তার ব্যক্তিগত ইমেজ বৃদ্ধির পাশাপাশি ফরিদপুর-৪ আসন নির্বাচনী এলাকায় নৌকার বেশ জোয়ার সৃষ্টি এবং আওয়ামীলীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া নেতাকর্মী দের অনেকেই ফের ঘরে ফিরতে শুরু করেন। (আগামিকাল দেখুন ৩য় পর্ব)