প্রতিবেদক ::
ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন আহ্বান জানিয়েছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন নিজ নিজ এলাকার ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার জন্য। আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি।
ড. কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে হয় সেজন্য পাহারা দিতে হবে জনসাধারণকেই। কারন দেশের মালিক হিসেবে আপনাদের এই কাজটি করতে হবে। পত্র-পত্রিকায় সবাই আশঙ্কা করছেন যে, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে নানাভাবে বাধা আসতে পারে। সেই বাধাগুলো যে কেউ দিক না কেন, বাধা দিলে সবাই মিলে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে রক্ষা করতে হবে।
একটা বিনীত নিবেদন, আপনারা নির্বাচনের ব্যাপারে সর্তক থাকবেন। পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে নিয়ে সকালে সকালে ভোট দিতে চলে যেতে পারেন। বুথ খোলার সাথে সাথে আপনারা সেখানে উপস্থিত হোন। প্রত্যেক বাড়িতে যত ভোটার আছে সবাই যেন ভোট দেয় সেই ব্যবস্থা করবেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট্রের অন্যতম প্রধান এই নেতা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কোন পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল তা সকলেই জানেন। এটা বিতর্কিত বিষয় নয় কোর্ট রায় দিয়েছে। সেখানেও অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন সংবিধানের বিধান। এটা খেয়ালিপনার বিষয় নয়।
তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী, জনসমর্থন পাব। তখন সংবিধানে যা আছে সেই আলোকে পথচলা অব্যাহত থাকবে। তবে যদি দেখি বা মনে করি, জনমতের আলোকে সংবিধানের ঘাটতি পূরণ করতে প্রয়োজনীতা দেখা দেয়, তখন জনগণ যে মতামত দেবেন সে অনুযায়ী সংবিধানে সংশোধনী এনে ঘাটতি দূর করা হবে।
নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই, উল্লেখ করে গণফোরামের সভাপতি বলেন, আমরা চাই, প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র, যে অধিকার সংবিধান আমাদের দিয়েছে এবং সেটা প্রতিষ্ঠায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে আমরা যাদের সঙ্গেই কথা বলেছি, তারা সবাই চায়, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার। সুষ্ঠু নির্বাচন দয়া-মায়ার ব্যাপার না, এটা জনগণের মালিকানার বিষয়।’
গণমাধ্যমকে সঠিক তথ্য প্রচার করার অনুরোধ করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম এই নেতা।
নির্বাচন কমিশন নিজেই সংবিধান অমান্য করছে, দাবি করে ড. কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন তো নিজেই সংবিধান অমান্য করছে। সংবিধান তাদেরকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তা অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। ফলে আপনাদের আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, যে বা যিনি আইন অমান্য করবে তাদেরকে ধরিয়ে দেওয়া।
ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি নিতে হবে, ছবি কিংবা ভিডিও করা যাবে না বলে নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আলাপ-আলোচনা চলছে, প্রয়োজনে এই ব্যাপারে আমরা কোর্টে যেতে পারি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরে বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ড. কামাল বলেন, এটাতে কোনো রহস্যের ব্যাপার নেই। আমার বয়স ৮০ বছর। বঙ্গবন্ধুর সময় আমার সাথে কেবিনেটে যারা ছিলেন তাদের কেউ নেই। একজন আছেন, কিন্তু তার অবস্থা বেঁচে না থাকার মতোই। শুধু আমি একটু কাজ করতে পারছি। এই অবস্থায় আমার নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
এতগুলো যোগ্য ব্যক্তি রাজনীতি করছেন, তাতে আমার ভালো লাগছে। আর নির্বাচন করছি না ঠিকই, কিন্তু আমি কাজ থেকে সরে যাচ্ছি না। আমার নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত আজকের না। এতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খোঁজা উচিত না।
বিএনপি কিংবা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যৌথভাবে নির্বাচনী ইশতেহার দেবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইশতেহার লেখা হচ্ছে, দুই-তিন দিনের মধ্যে তা প্রকাশ করা হবে।
এ সময় গ্রেপ্তারের তালিকা দেখিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও ৬৮১ জনের বেশি গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে তিনজন প্রার্থীও আছেন। এটা করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা যেন পালন করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্ত করা হোক।
গ্রেপ্তার না কমলে বৃহত্তর কর্মসূচিঃ
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। কিন্তু তফসিলের পরও আটক করা হচ্ছে। এভাবে চললে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি না দিলে জনগণের কাছে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। আশা করব, ড. কামাল হোসেন এর এই সংবাদ সম্মেলনের পর গ্রেপ্তার বন্ধ হবে। অন্যথায় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য আমরা বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নতুন ঠিকানাঃ
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জন্য নতুন কার্যালয় হয়েছে, জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নতুন অফিসের ঠিকানা হচ্ছে- ৩৭/২, পুরনো পল্টন, জামান টাওয়ারের চতুর্থ তলা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা ডাকসুর প্রাক্তন ভিপি সুলতান মো. মুনসুর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান (বীর প্রতীক) প্রমুখ।