মামুনুর রশিদ ::
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসনে নির্বাচনী হাওয়া একটু ভিন্ন মাত্রার উৎসবে পরিলক্ষিত হয়ে আসছে সাধারণ ভোটারদের দৃষ্টিতে।
সাধারণ জনতার ভাষ্য মতে, এবার সকল দলের অংশ গ্রহনের নির্বাচন ঘোষণায় সেই উৎসব মাত্রা আরও একটি ধাপে এগিয়ে চলেছে।
রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের ভাষ্যমতে, বিএনপির দুই প্রার্থী নিয়ে রাজনৈতিক নাটকীয় মঞ্চ তৈরি হয়েছে ভাঙ্গায়। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের মূল কাণ্ডারিদের কেউ কেউ দুই নেতার সাথে যুক্ত হয়ে এই নাটকীয় মঞ্চ সৃষ্টি করেছে।
সূত্রমতে, ভাঙ্গায় যারা বিএনপির রাজনীতির ধারক হিসাবে অতীতে লিড দিতেন তাদের মধ্যে অনেকেই আওয়ামী রাজনীতির সাথে অথবা স্বতন্ত্র নেতার সাথে যোগ দেওয়ায় হালে পানি পায়নি বিএনপি। এছাড়া রাজনৈতিক পরিসংখ্যানে ফরিদপুর-৪ আওয়ামীলীগেরই আসন।
দলীয় নেতাকর্মীদের মতে, মরহুম গাফফার খান, আক্তারুজ্জামান মন্নু মিয়া, মঞ্জুর হাসান খাঁন, এবং সর্বোপরি এম এম শাহরিয়ার রুমির হাত দিয়ে ভাঙ্গায় গড়ে উঠা আধুনিক বিএনপির অবস্থান “বিদ্যালয়ে তিনজন শিক্ষার্থীর মধ্যে হারাধনের পোলার রোল নম্বর-১”। আজও নাজুক অবস্থায় বিএনপির চলাম রাজনীতি।
জাতীয় নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে বরাবরের মত মনোনয়ন পেয়েছেন ভাঙ্গার ঐতিয্যবাহী আওয়ামীলীগ পরিবার ও কাজী পরিবারের সন্তান আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বর কাজী জাফর উল্লা।
আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন স্বতন্ত্র সাংসদ মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন এমপি।
বিএনপি থেকে কেন্দ্রীয় জাসাস নেত্রী শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা ও ভাঙ্গা বিএনপির সভাপতি আলহাজ খন্দকার ইকবাল সেলিম মনোনয়ন পত্র জমা দেন।
গতকাল রবিবার প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বাছাই করে চারজন প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়।
বৈধ চার প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামীলীগ থেকে মনোনীত প্রেসিডিয়াম মেম্বর কাজী জাফর উল্লা, স্বতন্ত্র সাংসদ মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, কেন্দ্রীয় জাসাস নেত্রী শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা ও ভাঙ্গা বিএনপির সভাপতি আলহাজ খন্দকার ইকবাল সেলিম।
বিএনপির দুই প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র বৈধ ঘোষণায় বিবদমান দুই নেতার কর্মী সমর্থকেরা উচ্ছ্বাসিত ও আনন্দিত।
কিন্তু সাধারণ জনগণের মধ্যে তৃতীয় নয়নধারীরা বিএনপির দুই নেতাকে নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। তাদের সমালোচনার ঢেউ যেন সমুদ্র বারীকুলের মত পাড় ভাঙার গান। তাদের ভাষায়@
বিএনপির দুই নেতার মধ্যে কে থাকছেন এবং কে থাকবেন? চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর বিদায় নিচ্ছেন কে? এই নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে ভাঙ্গা সদরপুর ও চরভদ্রাসন এলাকার জনগণের মধ্যে।
নির্বাচনী হাওয়ায় বিএনপির একজন প্রার্থীকে নিয়ে ফেসবুকে দুলছে বিবিধ প্রচার। শায়লা একটি সময় বাংলা সিনেমার হট নায়িকা ছিলেন। তার পিছনে ফেলে আশা হট সিম্পল কিছু গান সামাজিক মাধ্যেমে কে বা কারা ছড়িয়ে দিয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের পটভূমিকায় এই ধররনের প্রচারকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়ে ইসির দৃষ্টি কামনা করেছেন শায়লার সমর্থক ভাঙ্গা বিএনপি নেতা আলিউজ্জামান লাব্লু।
তার ভাষ্যমতে, এই ধরনের অপপ্রচারে দলের এবং দলীয় নেতাকর্মীদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। পাশাপাশি তিনি বলেন, এই ধরনের অপপ্রচারে শায়লার চূড়ান্ত মনোনয়ন পেতে বাধাগ্রস্থ হবে না। কারন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন মিছিলে শায়লার ভূমিকা কারো অজানা নেই। তার নেতাকে দল থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিবে বলে তিনি আশাবাদ।
বিএনপির অপর পক্ষের ভাষ্যমতে, ইকবাল হোসেন সেলিম শিল্পপতি ও বিত্তবান! দলের জন্য তার মত নেতার কোন বিকল্প নেই। তিনি মাঠে ছিলেন এবং আছেন। ভাঙ্গা বিএনপির দুর্দিনে তিনি এগিয়ে এসে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে রেখেছেন এবং নিজে সাথে থেকেছেন। দলীয় চূড়ান্ত মনোনয়ন তার পক্ষে থাকবে বলে আশাবাদী সেলিম সমর্থক আলম মুন্সীসহ নেতাকর্মীদের।
কিন্তু শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা আর্থিক জটিলতা কিছুটা থাকলেও নেতা হিসাবে ভাঙ্গায় তার গ্রহণ যোগ্যতা, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে শক্ত লবিং এবং বাংলা সিনেমা জগতের গ্লামার পরিচিতি ও ভাঙ্গায় নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
পাশাপাশি স্থানীয় বিএনপির বড় একটি অংশের বিশেষ সমর্থন রয়েছে বলে শায়লা পন্থী তৃণমূল বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীর অভিমত।
এদিকে রবিবার জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রার্থীদের বাছাই পর্বের কিছু সময় আগে খন্দকার সেলিমকে মাঠে রাখার জোর দাবী জানিয়ে সভাপতির খন্দকার টাওয়ারের ২য় তলায় সংবাদ সম্মেলন করেন ভাঙ্গা সদরপুর ও চরভদ্রাসন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে খন্দকার সেলিমকে চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
ছাত্রদল ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের অনেকেই সাদা কাফনের কাফর পরিধান করে সেলিমের পক্ষে দলীয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়ার জন্য সাংবাদিকদের সামনে নিজেদের উপাস্থাপন করেন।
সেলিম খন্দকারের সমর্থকদের সংবাদ সম্মেলন! সংবাদ সম্মেলনে কাফনের কাফর! এনিয়ে ভাঙ্গার রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নানা বিঁধ গুঞ্জন! অশুভ কোন সংকেত ধেয়ে আসছে? বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন কি শায়লার কোটে যাচ্ছে !
জানা গেছে, শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা দলীয় প্রার্থীর পছন্দের তালিকায় ১ এবং খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম ২য়। দুজনের কাছ থেকেই কেন্দ্রীয় কমিটি মনোনয়ন বিক্রিকালে প্রত্যাহারের পত্রও হাতে নিয়েছেন। বিদ্রোহী হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
এদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রাপ্ত দুই নেতাকে নিয়ে ভোটের হিসাবে নিকেশ কষতে শুরু করছে প্রতিপক্ষ। এই দুই নেতার গ্রহন যোগ্যতা নাকি নির্বাচনের ভোটের হিসেবে কিছুটা ভিন্ন ধারায় বইতে শুরু করেছে।
নির্বাচনী হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে প্রতিপক্ষ দলের নেতাকর্মীর অনেকের সাথে চক্ষুর অন্তরালে যোগাযোগ রক্ষাও করা হচ্ছে কিনা এমন আশংকা উড়িয়ে দিচ্ছেন না অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতারা।
বিএনপির মনোনয়ন প্রাপ্তির পর শায়লা স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়ে ছিলেন, কেন্দ্র থেকে তাকে ১ নম্বর মনোনয়ন এবং খন্দকার সেলিমকে ২ নম্বরে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন পত্র জমাদানের ক্ষেত্রে যদি ভুল ত্রুটি দেখা দেয় সেই ক্ষেত্রে একজন হয়ত প্রাথী থেকে যাবে।
খন্দকার সেলিম সাংবাদিকদের জানিয়ে ছিলেন, আমরা প্রত্যাশা করছি, দেশের জনগণ ধানের শীষে ভোট দিতে অধীর আগ্রহে বসে আছেন। ইনশাল্লাহ, আমরা জয় যুক্ত হব, বাংলাদেশ সুশাসন ফিরে পাবে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।
প্রসঙ্গত কারনে উল্লেখ্য, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী জাফর উল্লা স্বতন্ত্র নেতা মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন এমপির কাছে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে সাপে নেওলে সম্পর্কের সূত্রতায় রাজনৈতিক পটভূমিকায় বিভিন্ন সময়ে মুখোমুখি দৃশ্যমান ছিল ভাঙ্গার রাজনীতি।
কাজী জাফর উল্লা ও স্বতন্ত্র এমপি এই দুই নেতার মধ্যেবর্তী অবস্থানকারী ভঙ্গুর অবস্থায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে কেন্দ্রীয় জাসাস নেত্রী শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা ও ভাঙ্গা বিএনপির সভাপতি আলহাজ খন্দকার ইকবাল সেলিম রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে কেন্দ্রীয় বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচীতে ছিলেন সোচ্চার।
কিন্তু বিএনপি নেতা খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা কেন্দ্রীয় সকল কর্মসূচীতে অগ্রনী ভূমিকা পালনের পাশাপাশি সাংবাদিক বান্ধব নেতা হিসাবে ভাঙ্গার সর্বমহলে তার সুপরিচিতি রয়েছে।
ভাঙ্গায় বিএনপির রাজনীতিতে রুমি মোল্লার হাত ধরে সেলিম আসার পর রুমি মোল্লার প্রস্থানের পর সেলিম ধরে রেখেছেন এটাও অকপটে স্বীকার করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
এবার শুধু অপেক্ষার পালা ফরিদপুর-৪ আসনে বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী হচ্ছেন কে ?