ডেস্ক প্রতিবেদক ::
পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২০ সালে। তাতে নাম লেখাতে চলেছেন হাওয়াইয়ের হিন্দু ডেমোক্র্যাট সেনেটর তুলসী গব্বার্ড। আগামী সপ্তাহে সেই সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করবেন।
মার্কিন চ্যানেল সিএনএন-কে দেওয়া সাক্ষাত্কারে নিজেই সে কথা জানালেন তিনি। স্থানীয় সময় শনিবার রাতে মার্কিন মুলুকে সাক্ষাত্কারটি সম্প্রচারিত হবে। তার পরsই সবিস্তার তথ্য উঠে আসবে। তবে আগেভাগে রেকর্ড করা সাক্ষাত্কারের ঝলক দেখে এখনও পর্যন্ত যেটুকু তথ্য সামনে এসেছে, তা নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। কারণ তুলসীই প্রথম হিন্দু মহিলা, যিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে নাম লেখাতে চলেছেন।
সম্প্রতি সিএনএন-এর ‘দ্য ভ্যান জোন্স শো’-তে হাজির হন তুলসী। সেখানে তিনি জানান, প্রোসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে নাম লেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করব আগামী সপ্তাহে। ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্যবিমা সংক্রান্ত সমস্যাগুলির সমাধান বার করাই তাঁর লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে যুদ্ধের অবসান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দি়য়ে দেখতে চান। তিনি বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্তের পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত মার্কিনবাসী। সেগুলির সমাধান করতে চাই।’’
তুলসী গাব্বার্ড-এর মা ক্যারোল এবং বাবা মাইক গব্বার্ড ছিলেন আমেরিকান সামোয়া। তুলসীর দু’বছর বয়সের সময়ই তাঁরা পাকাপাকিভাবে হাওয়াই-য়ে চলে আসেন। খ্রিস্টান হলেও বাড়িতে হিন্দু ধর্মের মন্ত্রতন্ত্র, কীর্ত্তন চর্চা হত। তাঁর মা হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন এবং হিন্দু ধর্মের কিছু আচার, রীতি-নীতিও পালন করতেন। তাতে অনুপ্রাণিত হয়ে কিশোরী বয়সে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন তুলসী। ৩৭ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী হিসাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নামতে চলেছেন তিনি। মার্কিন কংগ্রেসে জায়গা পাওয়া প্রথম হিন্দুর শিরোপাও তাঁর দখলে। ঝুলিতে রয়েছে ইরাক যুদ্ধের অভিজ্ঞতাও। তবে লড়াইটা খুব একটা সহজ হবে না বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
তাঁদের যুক্তি, ডেমোক্র্যাটদের হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নাম লেখাতে চলেছেন অনেকেই। ম্যাসাচুসেটসের সেনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ইতিমধ্যেই কাজকর্ম শুরু করে দিয়েছেন। নিজের উদ্যোগে একটি কমিটি গড়েছেন তিনি। যাদের নির্দেশ মেনে বিভিন্ন প্রদেশগুলি ঘুরে দেখতে শুরু করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে প্রার্থী হতে পারেন কমলা হ্যারিস, নিউ জার্সি থেকে কোরি বুকার এবং ভারমন্টের বার্নি স্যান্ডার্স তো রয়েইছেন।
আগামী কয়েক সপ্তাহে একে একে নিজেদের প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করতে শুরু করবেন তাঁরা। বারাক ওবামার আমলের জুলিয়ান কাস্ত্রো শনিবারই প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করবেন। আর জনপ্রিয়তায় এঁরা সকলেই তুলসীর চেয়ে এগিয়ে। তাই মানুষের মনে জায়গা করে নিতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে তাঁকে।
তুলসীকে ঘিরে বিতর্কও কম নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত্ নিয়ে ডোমোক্র্যাটদেরই তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের কড়া সমালোচক আমেরিকা। যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা এবং রাসায়নিক হামলা চালানো সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
এ হেন আসাদের সঙ্গে ২০১৭ সালে তুলসীর সাক্ষাত্ নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। সিরীয় মানুষের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেন বলে সেই সময় দাবি করেন তিনি। এমনকি রাসায়নিক হামলায় আদৌ আসাদের হাত রয়েছে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দেন। তাঁর এমন অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেন মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যরা। রিপালিকানদের তরফে তাঁকে আসাদের মুখপাত্র বলেও উল্লেখ করা হয়। ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিন্টনের বদলে বার্নি স্যান্ডার্সকে সমর্থন করায় ডেমোক্র্যাটদের একাংশও তাঁর উপর চটে যান। নিউজ আনন্দবাজার