সংবাদদাতা ::
অস্বাভাবিক জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায় নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থীদের স্বাগত জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিতের তাগিদেই গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর কাছে উত্তর-দক্ষিন ও পশ্চিমাঞ্চলের ১৪ জেলার সশস্ত্র ৫৯৫ জন চরমপন্থী নেতা ও সদস্য আত্মসমর্পণ করেন।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে পাবনা, টাঙ্গাইল, যশোর, নড়াইল, সাতক্ষীরা, খুলনা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, বগুড়া, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী ও নওগাঁর ৬১৪ জন নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিস্টপার্টি এম এল লালপতাকা, জনযুদ্ধ, সর্বহারা, কাদামাটি পার্টি ও নকশালের আঞ্চলিক নেতা ও সদস্যদের আত্মসমর্পণের কথা থাকলেও অবশেষে ৫৯৫ জন আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণকালে চরমপন্থীরা বিভিন্ন ধরনের ৬৮টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৫৭৫টি দেশীয় অস্ত্র জমা দেন। বিকেল ৩টায় পাবনার শহীদ আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ সময় প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ১৯৯৯ সালেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দুই হাজার চরমপন্থী আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। তিনি বলেন, আজো যারা আত্মসমর্পণ করেননি যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা আত্মসমর্পণ করলে তাদেরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশ-গোয়েন্দা সংস্থা আর আগের মতো নেই।
তারা বর্তমানে জলদস্যু, বনদস্যু, চরমপন্থী, মাদক সন্ত্রাসীদের দমন করতে সক্ষম। যেকোনো ধরনের নাশকতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নির্মূলে পুলিশ বাহিনী সোচ্চার। তিনি বলেন, পাবনার এই অনুষ্ঠানে যেসব চরমপন্থী আত্মসমর্পণ করলেন, তাদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষিত। তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার নির্দেশনা দিয়েছেন।
পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বিপিএম-পিপিএমের সভাপতিত্বে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
আইজি তার বক্তব্যে বলেন, ২০ বছর পর আবারো চরমপন্থীদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি, সন্ত্রাসী দমনের কারণে বর্তমানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে সন্ত্রাসী নামক বাহিনীগুলো। তিনি বলেন, ২১ পুলিশ সদস্যের প্রাণের বিনিময়ে ২০১৩-১৪ সালে অগ্নিসন্ত্রাস রুখে দিয়েছিল দেশের চৌকস পুলিশবাহিনী। অনেক পুলিশ সদস্যের প্রাণের বিনিময়েই ২০১৬ সালে উগ্রপন্থীদের রুখে দেয়া সম্ভব হয়েছে। উগ্রপন্থী নির্মূলে বাংলাদেশ পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, পাবনা ১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন, পররাষ্ট্র সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য, পাবনা-৫ আসনের এমপি গোলাম ফারুক খোন্দকার প্রিন্স, পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির, রাজশাহী বাঘার এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, পাবনা-সিরাজগঞ্জ সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা আক্তার জলি ও পাবনা জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তৃতা দেন : রাজশাহী, নওগাঁ অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিস্টপার্টি এম এল লালপতাকার আঞ্চলিক নেতা আব্দুর রাজ্জাক বাবু ওরফে আর্ট বাবু। তিনি তার বক্তৃতায় বলেন, আমি অতি বামপন্থী সশস্ত্র সংগঠনে জড়িয়ে পড়েছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার সময়ে। তাদের রাজনৈতিক তত্ত্ব ও কথার সাথে কাজের মিল নেই। এমনটি জানা বোঝার পরও সংগঠন থেকে বের হওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলাম না।
বাবু বলেন, সংগঠনের সাথে জড়িত অবস্থায় রাজশাহী কারাগারে যাই। ২০০৮ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। সেখানে চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরলে তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের সব সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। এ ঘোষণার পর জেলখানাতেই তিনি অন্য সহকর্মীদের সাথে আলোরপথে ফেরার পরামর্শ করেন।
আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থী পরিবারের পক্ষে বক্তৃতা দেন : পাবনার চরমপন্থী নেতা ইকবাল শেখের স্ত্রী রতœা খাতুন। তিনি বলেন, আমার স্বামী ভুল করে ভুল পথে গিয়ে বিপথগামী হয়েছিল। তার কারণে সমাজে, পরিবারে, আত্মীয়স্বজনের কাছে মুখ দেখাতে পারিনি। আমার স্বামীসহ যারা আলোর পথে এলেন, তারা যেন এই সমাজে স্বাভাবিকভাবেই জীবনযাপন করতে পারেন।
আত্মসমর্পণের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আর্থিক প্রণোদনা তুলে দেন, ফরিদপুর-রাজবাড়ী অঞ্চলের লাল পতাকার নেতা আনোয়ার হোসেন, পাবনার সর্বহারা নেতা মোবারক হোসেন, ফরিদপুর-পাবনার সর্বহারা নেতা ইউসুফ ফকির ওরফে মিন্টু ফকির, সিরাজ সিকদার গ্র“পের মনসুর ওরফে স্বপন,
সিরাজগঞ্জ-নাটোর-রাজশাহী-নওগাঁ-বগুড়া অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত লালপতাকার নেতা আবু তালেব শেখ, সিরাজগঞ্জের লালপতাকার নেতা আব্দুল আলীম, পাবনার লালপতাকার নেতা বাবলু ব্যাপারী, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ইকবাল শেখ, নাটোর-রাজশাহী-নওগাঁ-চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের লালপতাকার নেতা আব্দুর রাজ্জাক বাবু ওরফে আর্ট বাবু,
সর্বহারা নেতা আতাউর রহমান ওরফে মোশারোফ, বগুড়া-নওগাঁ অঞ্চলের লালপতাকার নেতা মহসিন আলম, নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি খুলনা-সাতক্ষীরা ও যশোর অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ফারুক মোল্লা, একই সংগঠনের আব্দুল্লাহ আল মামুন, লিপু ব্যাপারী ও জয়পুরহাটের কাদামাটি সংগঠনের রমজান আলী সর্দারের হাতে।