লিড-নিউজ দক্ষিণাঞ্চল অফিস :: ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দি গ্রামে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে জোড়া খুনের মামলায় পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে ওই এলাকা। একাধীক পরিবারের অভিযোগ পুরুষ শুন্যতার কারণে আসামী পক্ষের পরিবারের সদস্যদের মাঝে চরম আতংক বিরাজ করছে। তাদের ভাষ্যমতে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রেশ ধরে আসামিদের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি নীরহ পরিবারের ঘর বাড়ি ভাংচুর লুটপাটের ঘটনায় সাধারণ পরিবারগুলোর মাঝে নানাবিবিধ ভয় ও আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। অসহায় হয়ে দিন কাটছে একাধীক পরিবারের। অভিযোগ রয়েছে জোড়া খুনের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রতিপক্ষের পাশাপাশি গ্রামের অসহায় সাধারণ খেঁটে খাওয়া বেশ কয়েকটি পরিবার হামলার শিকার ও বাড়িতে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
সরজমিনে গিয়ে বিভিন্ন পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, গ্রামের বিভিন্ন পরিবারের কেউ কেউ এই হত্যাকাণ্ডের জের ধরে পূর্বশ্ত্রুতা উদ্ধারে অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে। জান্দি রেল লাইন গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালামের স্ত্রী অঞ্জনা সাংবাদিকদের জানান, তার পরিবারের লোকজন সবাই খেঁটে খাওয়া মানুষ। তার স্বামী বা তারা কেউ গ্রামের রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। কিন্ত ভোর রাতে এসে শত শত মানুষ তাদের বাড়িতে এসে হামলা করে এবং তার পালের গোয়াল ঘর থেকে ৫টি গরুসহ ঘরের মালামাল লুট করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে তার পরিবারের সদস্যরা অসহায় দিনযাপন ও অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়ে দিন রাত পার করছেন।
তবে স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে ঘটনার পর থেকেই জান্দি গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যদি কেউ কোন বাড়িতে হামলা বা লুটপাট করেছে বলে এমন অভিযোগ করে তাহলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সোলেমান শরিফ ও কামরুল মাতুব্বর হত্যাকাণ্ডের সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে ভাঙ্গা থানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফাহিমা কাদের চৌধুরী এক সাংবাদিক সম্মেলন থেকে পুলিশের অবস্থান সম্পর্কে পরিস্কার করার পাশাপাশি ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে দাবী করে তিনি বলেন, দ্রুত তারা মূল অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের কাঠ গোঁড়ায় হাজির করবেন।
এদিকে ভাঙ্গা থানার চাঞ্চল্যকর সলেমান শরীফ ও কামরুল মাতুব্বর জোড়া খুনের ঘটনায় খুনের নেপথ্য কারণ জানিয়ে সংবাদ সন্মেলন করেছে ভাঙ্গা থানা পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) রাতে ভাঙ্গা থানায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফাহিমা কাদের চৌধুরী সংবাদ সন্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দি গ্রামে কামরুল ও জামাল মাতুব্বরের মধ্যে এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে পূর্ব থেকেই শত্রুতার জের থেকে গত ৭ এপ্রিল রাত ৯টার সময় মোটরসাইকেলে তিনজন বাড়ি ফেরার পথে জামাল-বালাদের হামলায় ধারালা অস্ত্রের আঘাতে ঘটনা স্থলে নিহত হন সোলেমান শরিফ।
এসময় গুরুতর আহত অপর দুইজনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ভাঙ্গা হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক কামরুল মাতুব্বরকে ফরিদপুর প্রেরন করার পর রাতেই তাকে ঢাকায় নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নিহত কামরুলের ভাই রুবেল মাতুব্বর বাদী হয়ে ভাঙ্গা থানায় এজাহার দায়ের করেছে এবং পুলিশের হাতে আটক আসামি মদ্দি মাতুব্বর হত্যাকান্ডে নিজেকে ও অপররাপর আসামিদের জড়িত থাকার বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারামতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী প্রদান করছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযান চালিয়ে এই পর্যন্ত তিনজনকে আটক করেছে।
সংবাদ সন্মেলনে উপস্থিত ছিলেন,ভাঙ্গা থানা অফিসার ইন চার্জ মোঃ সেলিম রেজা, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুমন প্রমুখ।
উল্লেখ্য গত ৭ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে পোদ্দার বাজার থেকে একটি মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে প্রতিপক্ষের ধারালা অস্ত্রের আঘাতে সোলেমান শরিফও কামরুল মাতুব্বর নামের দুই যুবক নিহত হন। থানায় মামলা হওয়ায় পর পুলিশ এ ঘটনায় মোট তিনজনকে আটক করেছে।