মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা :: এগিয়ে আসছে মাহেন্দ্রক্ষণ। কাঙ্ক্ষিত সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এর বাকি আছে আর মাত্র ছয় দিন। ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন স্বপ্নের পদ্মা সেতু।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সরকারের মূল আয়োজন থাকবে পদ্মার দুই পাড়ে। আর আওয়ামী লীগ এবার তাদের দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে পদ্মা সেতু যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২৩ জুন সারা দেশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং পদ্মা সেতুর উদ্বোধন যুগপৎভাবে পালন করবে আওয়ামী লীগ। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে পদ্মা সেতু এলাকায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ। এ উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মিত হচ্ছে। এ দুটি ম্যুরালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি থাকবে। এর পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে উদ্বোধনী ফলক।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে সেতু উদ্বোধন করে সুধী সমাবেশে অংশ নেবেন।
এরপর গাড়িতে চড়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু পার হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে আরেকটি উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। সেতু এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে খুবই জমকালো। মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ৬৪টি জেলাতেও দেখানোর ব্যবস্থা থাকবে।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সেতুতে ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্ট রয়েছে, সেতুর বাইরে আছে আরও প্রায় ২০০ বাতি। সেতুর দুই পাড়ে স্থাপিত বিদ্যুতের উপকেন্দ্রে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ল্যাম্পপোস্টগুলোয় প্রতিটি বাতি জ্বালিয়ে পরীক্ষা করা হয়ে গেছে । জুনের মাঝামাঝি সময়ে পুরো সেতুতে আলো জ্বলে উঠেছে।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সফল করতে ১৮টি উপকমিটি গঠন করেছে সেতু বিভাগ। সব কটি কমিটি প্রায় প্রতিদিনই বৈঠক করছে। এর মধ্যে আমন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত কমিটি আমন্ত্রণ কার্ডের নকশা ও সজ্জার কাজ শুরু করেছে। মনোরম ভেন্যু, সাজসজ্জা, আসন ব্যবস্থাপনা ও অতিথিদের অভ্যর্থনার জন্য রয়েছে আলাদা কমিটি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও প্রদর্শনী থাকবে। অতিথিদের দেওয়া হবে উপহার-স্যুভেনির। অতিথিদের মাওয়া ও জাজিরা—দুই পাড়েই আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া করোনাকালে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য দুই পাড়েই একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিশিষ্ট রাজনীতিক ছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর আগে থেকে এই প্রকল্প দেশে-বিদেশে আলোচিত। এ জন্য অনুষ্ঠান যতটা সম্ভব আকর্ষণীয় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ওই দিন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে জনসভায় অংশ নেবেন। এটি অবশ্য দলীয় সমাবেশ। এর জন্য ইতিমধ্যে ঢাকা ও পদ্মার দুই পাড়ের জেলাগুলোর আওয়ামী লীগের নেতারা প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
এদিকে, ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কাঁঠালবাড়িতে অনুষ্ঠেয় জনসভায় ১০ লক্ষাধিক লোকের উপস্থিতি প্রত্যাশা করছে আওয়ামী লীগ।
মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মহিউদ্দিন বলেন, পদ্মা সেতু সারা বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা। এটা নিয়ে যদি কেউ কোনও নীলনকশা করে থাকে, তাহলে দেশের জনগণই তাদের উপযুক্ত জবাব দেবে এবং প্রতিহত করবে। কেউ এটি নিয়ে কোনও ষড়যন্ত্র করতে পারবে না।
প্রসঙ্গত, আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন। পরদিন থেকে সকাল থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দ্বার উম্মোচন হতে চলেছে।