নিজস্ব প্রতিবেদক :: ফরিদপুরের ভাঙ্গা-মাওয়া মহাসড়কের বগাইল টোলপ্লাজা এলাকা থেকে বুধবার (১৫ মার্চ) সকালে রেল পদ্মা লিংক প্রজেক্ট কাজে কর্মরত মোঃ নুর-ইসলাম নামে এক শ্রমিকের (শ্রমিক সরাবরাহকারী) মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রাস্তার পাশের একটি গাছে তাঁর ঝুলন্ত লাশ পথচারীরা দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেওয়ার পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
নুর-ইসলাম ঢাকা জেলার বিক্রমপুর শ্রীনগরের মৃত মনোখুশির ছেলে এবং ভাঙ্গায় রেল পদ্মা প্রজেক্টের সাবকন্ট্রাক্টর হিসেবে গত পাঁচ মাস আগে কাজে যোগদান করে।
এদিকে মোঃ নুর-ইসলামের মৃত্যু নিয়ে এলাকায় একটি ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর স্ত্রী-শিরিনা বেগমের দাবী কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিয়ে কথিত মালিক পক্ষের সাথে বিবাদের সূত্রতায় তাঁর স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি দাবী করেন পুলিশ সঠিকভাবে ঘটনার তদন্ত করলে রহস্য বেড়িয়ে আসবে তাঁর স্বামীকে হত্যা করার পিছনে দায়ী কারা?
এদিকে পুলিশ বলছে নুর ইসলামের ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর হত্যা না আত্মহত্যার রহস্য বেড়িয়ে আসবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নুর ইসলাম রেল পদ্মা লিঙ্ক প্রজেক্ট কোম্পানি সিআরইসি চায়না গ্রুপের দোভাষী তাবাসসুম ট্রেডার্স স্বত্বাধিকারী তানভীরের সাথে সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে বামনকান্দা রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম তৈরির গাথুনী ও ব্লক বিছানোর কাজ করতেন। কাজে যোগদান পর থেকেই দোভাষী তাবাসসুম ট্রেডার্স স্বত্বাধিকারী তানভীরের সাথে ৩০ জনের একটি শ্রমিক সদস্যদের নিয়ে কাজ করতেন। বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিয়ে প্রায় তাঁর সাথে ঝুঁটঝামেলা লেগেই থাকত। বিশেষ করে এক মাস পয়তাল্লিশ দিন পড়ে বিল পরিশোধ করার চুক্তি থাকলেও নামমাত্র বিল দিত এবং পুনরায় জোরপূর্বক তাদেরকে দিয়ে কাজ করাত তাবাসসুম ট্রেডার্স স্বত্বাধিকারী তানভীর ও তাদের লোকজন।
নুর ইসলামের পার্টনার মোঃ ফিরোজ হোসেন বলেন, নুর ইসলাম ও আমি একসাথে পাঁচ মাস আগে তানভীর নামক দোভাষীর থেকে প্ল্যাটফর্ম তৈরি, গাথুনির কাজ ও ব্লক বিছানোর কাজটি নিয়ে ছিলাম। আমাদের মাঝে চুক্তি হয় দেড় মাসের মধ্যে বিল পরিশোধ করা হবে। চুক্তি মোতাবেক বাড়ি থেকে জমি বিক্রি করে পাঁচ লক্ষ টাকা নুর ইসলাম ও আমি শ্রমিকদের কাজের বিপরীতে ব্যয় করি। কিন্তু তানভীর গত পাঁচ মাস ধরে আমাদেরকে কোন বিল পরিশোধ না করে আজকাল বলে কাল ক্ষেপণ করতে থাকে। এদিকে জনপ্রতি একেকজন শ্রমিক ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে আমাদের নিকট পায়। শ্রমিকেরা নিজেদের এলাকার হওয়ায় বকেয়া টাকার চাপে আমরা দুজনের কেউ বাড়ি ঘরে যেতে পারছিলাম না। তিনি আরও বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় তানভীরের নিকট টাকা চাইতে গেলে সে আমাদের মারধর করে। নুর ইসলাম আমার পাশের রুমেই থাকত। টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করায় তানভীর ও তাঁর লোকজন নুর ইসলামকে গলাটিপে হত্যা করার পর গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে বলে তাঁর অভিযোগ এনে বলেন লাশ বহন করে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার মত খরচটুকুও আমাদের কাছে (তাদের) নেই বলতেই বন্ধুর জন্য কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
নুর ইসলামের স্ত্রী শিরিনা বেগম বলেন, গত কয়েক মাস ধরে তাঁর স্বামী বাড়ি থেকে ভাঙ্গায় কাজের জন্য এসেছেন। নতুন কাজের জন্য বাড়ি থেকে বেশ কিছু টাকাও এনেছেন। আমাদের দুটি মেয়ে রয়েছে। বাড়ি যেতে বললে শুধু বলত এইত টাকা পাইলেই বাড়িতে আসবো। কিন্ত আমার নানার (স্বামীকে ভালবেসে নানা ডাকত) আর বাড়িতে ফেরা হলনা। আমার স্বামীকে যারা হত্যা করে আমাদের দুটি মেয়েকে এতিম করলো তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবী করেন তিনি।
ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জিয়ারুল ইসলাম বলেন, নিহত নুর ইসলামের উপর শ্রমিকদের টাকার চাপ ছিল। পুলিশ নুর ইসলামের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ায় পর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে দোভাষী তানভীরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।