নিজস্ব প্রতিবেদক :: প্রমত্ত পদ্মার উপর নির্মিত স্বপ্নের পদ্মাসেতুতে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম ট্রেন চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন কালে প্রধান অতিথি রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুব শীঘ্রই ঢাকা থেকে ভাঙ্গা রেল চলাচলের উদ্বোধন করবেন।
আজ মঙ্গলবার (৪ঠা এপ্রিল ) দুপুরে ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেল স্টেশনে পদ্মাসেতুর উপর দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম ট্রেন চলাচলের শুভ উদ্বোধন করেন তিনি।
মন্ত্রী আরও বলেন, সরকারের একটি বড় সাফল্য পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলাচল উদ্বোধনকে ঘিরে। এই সাফল্য আমাদের সকলের। রেল মন্ত্রী ও তার সফর সঙ্গীদের নিয়ে ভাঙ্গা রেল স্টেশন ও জংশন থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া প্রান্তের উদ্দেশ্যে ২৫ সিটের ট্র্যাক কার ও ছয়টি বগি নিয়ে দুপুর একটার সময় রেলপথে যাত্রা করেন ।
তার সফর সঙ্গী ছিলেন,বিশেষ অতিথি মাননীয় চিফ হুইপ নুরে-আলম চৌধুরী লিটন ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী কে এম এনামুল হক শামীম এমপি, ফরিদপুর ৪ আসনের সাংসদ মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, মুন্সিগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, শরীয়তপুর-১ আসনের সাংসদ ইকবাল হোসেন অপু, শরীয়তপুর ২ আসনের সাংসদ নাঈম রাজ্জাক, প্রধান সমন্বয়ক, মেজর জেনারেল এ কে এম রেজাউল মজিদ, এনডিসি, এ এফ ডব্লিউ সি, পিএসসি চীফ কনসালটেন্ট জেনারেল,বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার পিএএ, ফরিদপুর জেলা পুলিশ সুপার শাহজাহান পিপিএম।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাগণ, বাংলাদেশ রেলওয়ে, কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসাল্টেন্ট ও সিআরইসি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বৃন্দ ও টেলিভিশন ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দ।
একটি গ্যাংকারের পিছু পিছু যাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সদ্য আমদানীকৃত বগিতে তৈরি যাত্রীবাহী ট্রেন। গত বছরের ২৫ জুন দ্বিতল পদ্মা সেতুর আপার ডেক (ওপর তলা) যান চলাচলের জন্য উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্যাংকারটি (পরিদর্শন ট্রেন) ভাঙ্গা থেকে মাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এরপর ছয় বগির একটি ট্রেন পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়ায় যাবে। বগিগুলো কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়েছে। রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ট্রেনে যাত্রী হয়েছেন আবার সেতু পার হয়ে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা জংশনে ফিরবে।
উল্লেখ্য গত বছরের ২০ আগস্ট ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটর দীর্ঘ পদ্মা সেতুর লোয়ার ডেকে (নিচতলা) রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ছয় মাসের মধ্যে এই কাজ সম্পন্নের লক্ষ্য ছিল।
আগামী সেপ্টেম্বরে ঢাকার কমলাপুর থেকে মাওয়া, পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন চালাতে চায় রেলওয়ে। রেলমন্ত্রী যদিও একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছিলেন বতর্মান ২৩ সালের জুনেই যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, আগামী ডিসেম্বরে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা রুটে চলবে ট্রেন।
ঢাকা-মাওয়া অংশের কাজ পরিকল্পনার চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে। আরও ৫ থেকে ৬ মাস লাগতে পারে। এ বছরেই ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা রুটে ট্রেন চলবে। আগামী বছরে জুনে যশোর পর্যন্ত যাবে রেল।
ভাঙ্গা জংশন থেকে পদ্মা সেতুর পশ্চিমপ্রান্ত পর্যন্ত নব-নির্মিত ৩২ কিলোমিটর রেলপথে আগেও পরীক্ষামূলক ট্রেন চলেছে। তবে আজই প্রথমবারের মতো সেতু পার হচ্ছে ট্রেন। পরীক্ষামূলক চলাচল অব্যাহত থাকবে। ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচলে সক্ষম পদ্মা সেতুর রেলট্র্যাক কার।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মালামাল আমদানিতেও সমস্যা হয়। শেষ স্লিপারটি আকাশ পথে চীন থেকে দেশে আনা হয়। পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার হলেও পাথরবিহীন রেলপথ বসানো হয়েছে ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার।