• বুধবার, ৩১ মে ২০২৩, ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন

ফরিদপুরে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা বাজার

Reporter Name / ১৬ Time View
Update : বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সাত বছরের শিশু। ভাঙ্গা উপজেলার পশ্চিম হাসাম দিয়া গ্রাম থেকে বাবা মায়ের সাথে পছন্দের জামা কিনতে ফরিদপুর নিউ মার্কেটে এসেছে। মৃদু সূরের গলায় বলছিল তাঁর পছন্দ লাল জুতা লাল জামা কিনতে এসেছেন। রাফসানের মত বয়সের অনেক শিশুই তাদের বাবা মা পরিবারের সাথে ইদ কেনাকাটার জন্য এসেছে।

কিন্ত বিঁধি বাম! কেউ তাঁর পরিবারের জন্য কিছু কিনে দিতে পারছেন কেউ আবার সামান্য কিছু কেনা কাটার পর বাড়িতে ফিরছেন। কারন ঈদের আনন্দ পরিবারের মাঝে ভাগ করে নেওয়া আমাদের দেশের মানুষের একটি চিরন্তন স্বভাবের। কিন্ত তাহলে কি হবে দ্রব্যমূল্যের চরম উরধগতির গ্যাঁড়াকলে পড়ে এবার ঈদ সবার জন্য কতটুকুন আনন্দ বয়ে আনবে এমন প্রশ্ন উঠে এসেছে পরিবারের জন্য মার্কেট করতে আসা অনেক পরিবারের।

যাইহোক পবিত্র মাহে রমজান মাস সিয়াম সাধনার মাস। অন্যদিকে সিয়াম সাধনার মাস রমজান শেষে ঈদ আনন্দের উৎসবে আনন্দে মেতে উঠে সারাদেশের ধর্মপ্রান মুসলমান সম্প্রদায়। প্রতিবারের মত আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর ঘিরে জমতে শুরু করেছে ফরিদপুরের ঈদের বাজার। দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে জেলা সদর থেকে শুরু হয়ে উপজেলার ছোট-বড় শপিংমল, মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোতে ততই ভিড় জমে উঠছে ঈদ উপলক্ষে শত শত ক্রেতাদের কেনাকাটা ।

করোনাকালীন সময়ের বছর ব্যবসা মন্দা হলেও সেদিনগুলোর লোকসান পুষিয়ে নিতে পারলেও বর্তমানে বাজারের দাম দোস্তর এতটা চড়াও হওয়ায় বিক্রেতারা অনেকটা চিন্তিত। কারন প্রতিটি পাইকারি মালের দাম তাদেরকে কেয়কগুন বেশী দিয়ে ক্রয় করতে হয়েছে। এছাড়াও সম্প্রতি ঢাকার বংবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের বিশাল ক্ষয়ক্ষতির একটি বিশেষ প্রভাবও ঈদ বাজারে প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন সচেতন ব্যবসায়ীরা।

তথাপি সকল কিছু ছাপিয়ে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি এবং রমজানের শেষের দিকে গরম আবহাওয়ার তেজস্ক্রিয়তা উপেক্ষা করে পরিবার পরিজনদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করার ইচ্ছেতে হরেক রকমের ক্রেতারা খুঁজছেন শখ, সাধ্য আর নিজেদের পছন্দের পোশাক।

সরজমিনে দেখা গেছে ফরিদপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে সকাল থেকে ঈদ বাজার জমতে শুরু হয়। কিন্ত মূল বেচাকেনার ভিড় বাড়ছে ইফতার বা সন্ধ্যার পর থেকে। জেলা শহরের বিভিন্ন মার্কেট সাধারণ ক্রেতাদের জন্য প্রতিদিন খোলা থাকছে রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত। বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ, আবাল, বৃদ্ধের পোশাকের পাশাপাশি তাদের জুতা, স্যান্ডেল, মহিলাদের জন্য কসমেটিকস ও জুয়েলারি দোকানগুলোতেও ভিড় বেড়েছে। ঈদ মার্কেতে আসা অনেকের ভাষ্যমতে বড়দের পোশাক জেমনতেমন কেনাকাটা করা গেলেও শিশুদের পোশাক কিনতে গিয়ে মার্কেটের পর মার্কেই ঘুরে কিনতে হচ্ছে! একিই দোকান থেকে শিশুদের জন্য দুটি জুনিস করতে না পারায় তাদের বিভিন্ন দোকান ঘুরে কিনতে গিয়ে সময় অনেকটাই ব্যয় হচ্ছে। তবুও শান্তি কারন ঈদ বলে কথা। কারন ঈদ আমাদের আনন্দ ঈদ আমাদের পরিবারের সবার জন্য নতুন পোশাক কেনার একটি প্রতিযোগিতা বটে?

রমজান এর মাগফেরাত প্রায় শেষের দিকে। এরফলে ঈদ আনন্দ ঘনিয়ে আসছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ক্রেতার উপস্থিতি তত বাড়ছে বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১০/১২ রোজার পর থেকে আস্তে আস্তে জমে উঠেছে সকল শ্রেণীর পেশাজীবী মানুষের ঈদ-কেন্দ্রিক কেনাকাটা। এককথায় ঈদের আনন্দ নিয়ে ইদবাজারে কেনাকাটার ধুম পড়েছে শহর ও শরতলীতে পুরোদমে। শুধু জেলা সদরের বুকে নয় ঈদুল ফিতরের কেনাকাটায় চৈত্রর প্রখর রৌদ্র মাথায় নিয়ে উপজেলার মার্কেটগুলোও ক্রেতাদের উপস্থিতে বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে।

গতকাল দুপুরে ফরিদপুর শহরের নিউ মার্কেট থেকে শুরু করে বিভিন্ন মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রচণ্ড রোদকে উপেক্ষা করে সাধ ও সাধ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কেনাকাটার জন্য ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে মহিলারা কানের দুল, চুড়ি, গলার মালা, টিপ, ব্যাগ, জুতোসহ ঘর সাজানোর অন্যান্য জিনিস কিনছেন। ছেলেরা প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট, বেল্ট, মানিব্যাগ ইত্যাদি ক্রয় করছে। অসংখ্য ক্রেতারা ভিড় জমিয়েছে ফরিদপুর নিউ মার্কেটে। কেউ আবার পছন্দের জিনিসটি কেনার জন্য দোকানের সামনে দাঁড়াতেই পারছেন না ভিড়ের লারনে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এভাবেই বাড়ছে ভিড়ও।

ফরিদপুর নিউ মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা তাবাসুম বেগম নামে একজন ক্রেতা বলেন, ঈদের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছি পরিবারের সবাইকে নিয়ে। চেষ্টা করছি সাধ্যের মধ্যে শাড়ি, থ্রি পিচ, স্বামীর জন্য পায়জামা আর মেয়েটির জন্য মানসম্মত একটি পোশাক ক্রয় করার। তিনি আরও বলেন, মধ্য বৃত্ত পরিবারের জন্য সাধ্যের মধ্যে নিউমার্কেটে ভালো থ্রি পিস, শাড়ি পাওয়া যায় বলে নিউমার্কেটে এসেছি।

নিউ মার্কেটের দোতলায় সুধারাম নামে একজন দোকানিকে বেঁচাকেনা কেমন জিজ্ঞাসা করতেই তিনি জানালেন, রমজানের ১০ রোজা পর্যন্ত বিক্রি কিছুটা কম ছিল। কিন্ত গত কয়েকদিন ধরে বেশ ভাল বেচাকেনা হচ্ছে। তিনি আশাবাদ এখন থেকে চাঁদ রাত্রি পর্যন্ত অনেক ভাল বেচাকেনা হবে।

এদিকে নিউ মার্কেট ছাড়াও তাঁর আশেপাশে ভ্রাম্যমাণ দোকানের পশরা সাজিয়ে বসিয়ে ছোট ছোট প্রন্তিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জিনিস পত্র বিক্রি করছেন। মেয়েদের বিভিন্ন সাজানি ও ঘরের ছোটখাট আসবাবপত্র তারা বিক্রি করছেন। নিউ মার্কেটের ভেতরের চেয়ে বাইরের ভিড়টাই যেন ঈদের কেনাকাটা করতে আসা সবার চোখে পড়ার মতো। এসব মার্কেটগুলোও ঈদ উপলক্ষে বেশ জমে উঠেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন দুপুর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত হরদম বিক্রি হচ্ছে এসব মার্কেট গুলোতে।

ফরিদপুর পলিটেকনিক্যাল কলেজ ছাত্র ওয়ালিদুর রহমান বলেন, প্রতিবছর ঈদে আমার বাবা-মা আমার সাথে এসে আমাকে পছন্দের প্যান্ট শার্ট ও একটি পায়জামা কিনে দেন। কিন্ত এবছর বাবার সাথে না এসে আমার হাতে তিনহাজার টাকা দিয়ে আমার পছন্দের কাপড় কিনতে বলেন। আমি দোকানে এসে দেখি নিন্ম মধ্যেবৃত্ত পরিবারের জন্য ঈদ আনন্দ অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে। নামাজ পড়ার জন্য একটি ভাল পায়জামা এক হাজার টাকার নীচে পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যকিছু কেনার কথা না হয় নাই বল্লাম।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশ মোতাবেক পুলিশের কয়েকটি টিম মাঠে কাজ করছে। বিশেষ করে সাদা পোশাকেও পুলিশ মাঠে রয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে মার্কেটগুলোতে চুরি-ছিনতাই রোধে পুলিশের টহল টিমও সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আরও সংবাদ