নিজস্ব প্রতিবেদক :: এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া, ব্রহ্মনকান্দা, মৃধাকান্দা ও খাঁকান্দা নাজিরপুর গ্রামে বিবদমান দুই গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছে।
গুরুতর আহত মাসুদ মুন্সী (৩৫), শামীম মোল্লা (৪০), নজরুল মাতব্বর (৩০), বীর মুক্তিযোদ্ধা করিম মাতুব্বর (৮০) ১০ জনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সাধারনভাবে আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার সকাল আটটা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে দিয়ে থেমে চলতে থাকে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ভাঙ্গা থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। তবে পুনরায় সংঘর্ষের আশঙ্কায় গোটা এলাকায় একটি থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মানিকদাহ ইউনিয়নের চার গ্রামে দুটি দল দীর্ঘদিন ধরে শক্ত অবস্থায় থাকায় সহসায় কেউ কারো নেতৃত্ব বা সামাজিক কোন কাজের ক্ষেত্রে মানসিকভাবে মানতে পারেনা। এক গ্রুপে নেতৃত্ব দেন করিম মাতুব্বর, ইয়াকুব মিয়া। অপর গ্রুপে নেতৃত্ব দেন, কালাম মোল্লা, মজিবর তালুকদার ও শাহাবুর চেয়ারম্যান। দুই দলের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে সাপ ওবেজির মত বিরোধ চলে আসছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে ব্রাহ্মণকান্দা গ্রামের সরোয়ারের মুদি দোকানে পান খাইতে যায় ইয়াকুব মিয়া। ইয়াকুব মিয়া চলে যাওয়ার পরে তাকে কালাম মোল্লা গ্রুপের আক্কাস মাতুব্বর গালিগালাজ করে। ওই গালিগালাজের প্রতিবাদ করে ইয়াকুব গ্রুপের শাকিল মাতুব্বর ও জোবায়ের মাতুব্বর। এনিয়ে কালাম গ্রুপের লোকজন ওদেরকে ধাওয়া করে। উত্তেজিত হওয়ার একটি পর্যায়ে রাতেই দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
কিন্ত রাতের ঘটনার জের ধরে উভয় গ্রুপ রাতভর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে বুধবার সকালে সংঘর্ষের জড়িয়ে পড়ে। প্রায় দুইঘন্টা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে দিয়ে সময় ইয়াকুব মিয়া গ্রুপের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন। ভাংচুর চালানো হয় পুখুরিয়া রেল লাইনের হাজার মার্কেট পরিচিত ১৫টি দোকানে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ তাদের দোকানের মালামাল ভাংচুর করে ক্ষান্ত হয়নি তারা নগদ টাকাসহ দোকানের মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ী জাকির খান ও রোমান মিয়া।
মানিকদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ একে এম শহীদুল্লাহ বাচ্চু বলেন, ওই চার গ্রাম যদিও আমার ইউনিয়নে কিন্তু কেউ আমার কথা শোনে না। আমাকে চেয়ারম্যান হিসেবেও তারা মেনে নিতে চান না। সারা বছর জুড়ে এদের গন্ডগোল ফ্যাসাদ লেগে থাকে। প্রতিনিয়ত আমি তাদের পাশে পজিটিভ চেতনা নিয়ে দাড়াতে গেলে কিছু দুষ্ট চেতনার লোক রয়েছে যারা ঘটনার ক্ষেত্রে মীমাংসার জন্য রাজী থাকে না বলে ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি হয়েও তাদের পাশে দাড়াতে পারিনি।
নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহাবুর বলেন, ইয়াকুব মিয়ার লোকদের সাথে কালাম মোল্লা দলের কসাইদের সাথে কাটাকাটি নিয়ে সংঘর্ষ বাঁধে। কালাম মোল্লা গ্রুপের ১০-১২টি বাড়িঘর ভাঙচুর করে এবং ৭/৮ জন আহত হয়। মানিকদা ইউনয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় নুরুল্লাগঞ্জ ইউনিয়ন। যে কারনে একটি পক্ষের লোকজন আমাদের দলের সাহায্য চেয়েছিল। কিন্ত আমাদের লোকজন সংঘাতের স্থানে পৌঁছাবার আগেই দুটি গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে একপক্ষ অন্য পক্ষের বাড়ির ও দোকানে হামলা ও ভাংচুর করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
অপর গ্রুপের দলনেতা ইয়াকুব মিয়া বলেন, সরোয়ারের দোকানে পান খাইতে গেলাম কেন? এ নিয়ে তারা আমাকে গালিগালাজ করে কালাম ও চেয়ারম্যানের লোকেরা। পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে দেন। অথচ শাহাবুর চেয়ারম্যান, কালাম মোল্লা,মজিবর তালুকদার এরা রাতভর অন্য এলাকা থেকে লোক ভাড়া করে এনে আমাদের উপর সকালে অতর্কিত হামলা চালায়। আমার বাড়িসহ ভাই ভাতিজার অন্ততঃ ১৩টি বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটতরাজ করে। এসময় আমাদের প্রায় ২০ জন লোক গুরুতর আহত হয়েছে এবং আমাদের দুইজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা পাঠানো হয়েছে জানান।
ভাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ জিয়ারুল ইসলাম বলেন, ওই এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এখনো পযর্ন্ত কোনো পক্ষের অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।