• মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩, ১০:৪৮ অপরাহ্ন

সৌদি আরবে নিহত ফরিদপুরের হাবিবের বাড়িতে চলছে মাতম

Reporter Name / ৫ Time View
Update : সোমবার, ১৫ মে, ২০২৩

মামুনুর রশিদ :: সৌদি আরবে যাওয়ার সময় তিন মাস আগে পিতাকে আদর করেছিল শিশু ফাহাদ। বায়নাও ধরেছিল আরও অনেক কিছু কিনে দিতে হবে? যাওয়ার পথে নিজের সন্তানকে বলেছিল বাবা এবার বিদেশ ঘুরে আসার পরে তোমার বায়নার সকল ইচ্ছে পূরণ করবো।

বাবা বাড়িতে আসবে-তার বায়না ধরার ইচ্ছে পূরণ হবে সেই আশায় ছয় বছরের শিশু ফাহাদ যখন প্রতিক্ষা করছে বাবার জন্য ততক্ষণে তার পিতা সৌদি আরবের একটি মরুভূমিতে লাশ হয়ে পড়ে আছে। কিন্ত শিশু ফাহাদ জানতে পারে নি তার বাবা আজ আর বেঁচে নেই। শেষ বারের মত ফাহাদসহ পরিবারের কেউ বলতে পারছে না আদৌ ফাহাদের পিতার সাথে পরিবারের সদস্যদের শেষ দেখা হবে কিনা? বুধবার (৩ মে) বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টার সময় পুরনো একটি ঘর ভাংতে গিয়ে লোহার পাতের আঘাতে সৌদি আরবে নিহত হয়েছেন বাংলাদেশের রেমিটেন্স যোদ্ধা ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কাউলীবেড়া ইউনিয়নের পরারন গ্রামের নুরুল হক খালাসীর ছেলে প্রবাসী হাবিব খালাসী। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে সৌদি প্রবাসী হাবিব খালাসীর পরিবারে চলছে শোঁকের মাতম।

স্বজনেরা জানান, ২০১৮ সালে সৌদি প্রবাসী হন হাবিব খালাসী। সংসারে মা বাবা, একটি ছোট ভাইসহ স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান ফাহাদ। বিদেশ গিয়ে একটি ঘর ছাড়া তেমন কিছুই করার সুযোগ হয়ে উঠেনি সংসারের বিবিধ অভাব অনটনের টানপড়নে। এর উপর ছোট ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার কারনে ভাইকে মানুষের মত মানুষ করার লক্ষে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় সংসারের বড় ছেলে হিসেবে প্রবাসে। সবার মুখে হাঁসির ফোয়ারা তুলতে নিজেকে চীরতরে বিলিন করে দিবে এমনটা মনে করতেই বড় ভাইর জন্য হাউমাউ করে কেদে উঠেন ঢাকা বিসব্বিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ের শিক্ষার্থী ছোট ভাই মাহাবুব খালাসী। জানা যায় তিন মাসে দেশে এসেছিল হাবিব খালাসী । ছুটি তিনমাসের হলেও সংসারের হালহকিত দেখে এক মাস ছুটি কাঁটিয়ে ফের বিদেশ যাওয়ার জন্য মনস্থির করেন। বাবা নুরুল ইসলাম খালাসী বলেছিল আর কটা দিন থেকে যেতে। বাবার কথায় বারিতে থাকলেও বাড়িতে আসার পরে পরিবারের বিভিন্ন ঋনসহ সকল খরচ মিটিয়ে হাত শুন্য হয়ে পড়েছিল হাবিব খালাসীর। অবশেষে বাবা নুরুল হক খালাসীকে জানান, ফের কোন জায়গা থেকে ঋণ করতে।

কারন সৌদি আরবের আকামার সময় শেষ। আকামর সময় বাড়াতে তার টাঁকা লাগবে। অবশেষে স্থানীয় তিনটি এনজিও থেকে ছেলের জন্য (মাসে ৫৫ হাজার টাঁকা কিস্তি) ঋন করে আকামার টাঁকা জমা দেয় হাবিব খালাসী। বাবা নুরুল হক জানান, আমার ছেলে বিদেশ গিয়ে দুটি কিস্তির টাঁকা পাঠিয়েছিল। কিন্ত গতকাল বুধবার সৌদি আরবের আল খারিজ নামক জায়গায় স্ক্রাপের কাজ করার সময় আচমকা উপর থেকে একটি লোহারপাত পড়ে তার মাথায় ঢুঁকে পড়লে ঘটনা স্থলেই আমার বাবা হাবিব মারা যায়। এখন আমার চারদিকে শুধু অন্ধকার। আমার ছেলের একমাত্র সন্তান শিশু ফাহাদ। কিছুদিন আগে বাবার আদর নিয়েছে। আজ তার বাবা নেই। আমরা বলতে পারছি না কি করে ওকে বলতে পারি তোমার বাবা আর নেই-একথা বলতেই ছেলের শোকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন হতভাগ্য পিতা নুরুল হক। চাচা তারা মিয়া বলেন, আমার বড় ভাই নুরুল হক একজন কৃষিজীবী মানুষ।

হাবিব বিদেশে যাওয়ার সুবাধে পরিবারটি কেবল একটু সুখের আলোর মুখ দেখতে ছিল। কিন্ত নিয়তির কি করুন ইতিহাস চারদিন আগেও আমার ভাতিজা আমাকে ফোনে বলেছিল কাকা বাবার দিকে খেয়াল রেখ। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার মায়ের দিকে লক্ষ্য রেখ। আমার ছোট ভাই বড় কলেজে পড়ে। আরমাত্র কিছুদিন। ওর পড়ালেখা শেষ হলেই আমাদের ঘরে সুখ আনন্দ ভরে উঠবে একথা বলেই ভাতিজার জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। স্ত্রী আলেয়া বেগমের দাবী আমরা আজ অসহায়। কেউ নেই আমাদের । সরকার যদি আমার স্বামীর মৃতদেহ শেষ বারের জন্য আমার শিশু এতিম ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেন তাহলে আমার শিশুটি তার পিতার লাস কাঁধে নিতে পারবে। তা না হলে সন্তান হিসেবে সারাজীবন সেই কষ্ট নিয়ে চলবে আমাদের একমাত্র সন্তান।

সর্বোপরি বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয় ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিহত হাবিব খালাসীর বৃদ্ধ বাবা ও মায়ের জোর দাবী তাদের ছেলের মৃতদেহটি শেষবারের মত তারা যেন দেখতে পারেন। এজন্য সরকারের কাছে মানবিক আবেদন জানিয়েছেন নিহত প্রবাসী হাবীব খালাসি পরিবার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আরও সংবাদ